পরিমাপ (তৃতীয় অধ্যায়)

সপ্তম শ্রেণি (মাধ্যমিক) - গণিত - | NCTB BOOK
118
118

বাস্তব জীবনে আমরা প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরনের বস্তু ব্যবহার করি। সেই সব বস্তুর পরিমাণ নির্ণয় করাই হচ্ছে পরিমাপ। সাধারণত আমরা কঠিন বস্তুর ক্ষেত্রে দৈর্ঘ্য, ওজন, ক্ষেত্রফল ও আয়তন প্রভৃতি পরিমাপ করা হয়। কিন্তু তরল পদার্থের নির্দিষ্ট কোনো আকার নেই বিধায় একে কোনো পাত্রে রেখে পাত্রের আয়তন নির্ণয়ের মাধ্যমে তরলের পরিমাণ নির্ণয় করা হয়। এই অধ্যায়ে আমরা দৈর্ঘ্য, ক্ষেত্রফল, ওজন ও তরলের আয়তন পরিমাপের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।

অধ্যায় শেষে শিক্ষার্থীরা-

  • দৈর্ঘ্য পরিমাপের আন্তঃসম্পর্ক ব্যাখ্যা এবং এ সংক্রান্ত সমস্যা সমাধান করতে পারবে।
  • ওজন ও তরল পদার্থের আয়তন পরিমাপ কীভাবে করা হয় তা ব্যাখ্যা করতে পারবে এবং এ সম্পর্কিত সমস্যা সমাধান করতে পারবে।
  • স্কেল ব্যবহার করে আয়তাকার ও বর্গাকার ক্ষেত্রের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ পরিমাপ করে ক্ষেত্রফল নির্ণয় করতে পারবে।
  • ওজন পরিমাপের বিভিন্ন পরিমাপক ব্যবহার করে দ্রব্যাদির ওজন পরিমাপ করতে পারবে।
  • তরল পদার্থের আয়তন পরিমাপের বিভিন্ন পরিমাপক ব্যবহার করে যেকোনো তরল পদার্থের পরিমাপ করতে পারবে।
  • দৈনন্দিন জীবনে আনুমানিক পরিমাপ করতে পারবে।

common.content_added_by

দৈর্ঘ্য পরিমাপ (৩.১)

48
48

আমরা বাজারে গিয়ে কাপড়, বৈদ্যুতিক তার, রশি ইত্যাদি কিনে থাকি। একটা নির্দিষ্ট মাপের দৈর্ঘ্যের সাথে তুলনা করে এগুলো ক্রয়-বিক্রয় হয়। আবার বাড়ি হতে স্কুল, বাজার বা স্টেশন কত দূর তা-ও আমাদের জানার প্রয়োজন হয়। এই দূরত্বও আমরা ঐ নির্দিষ্ট মাপের দৈর্ঘ্যের সাথে তুলনা করে বের করি। এই দৈর্ঘ্যকে পরিমাপের একক বলা হয়। দৈর্ঘ্য পরিমাপের জন্য ২টি পদ্ধতি প্রচলিত। (১) ব্রিটিশ পদ্ধতি ও (২) মেট্রিক পদ্ধতি

ব্রিটিশ পদ্ধতিতে দৈর্ঘ্য পরিমাপের একক হিসেবে গজ, ফুট, ইঞ্চি চালু আছে। তা বর্তমানে পৃথিবীতে অধিকাংশ দেশে দৈর্ঘ্য পরিমাপে ব্যবহৃত হচ্ছে মেট্রিক পদ্ধতি। মেট্রিক পদ্ধতিতে দৈর্ঘ্য পরিমাপের একক হিসেবে মিটার, সেন্টিমিটার, কিলোমিটারে চালু রয়েছে। পৃথিবীর উত্তর মেরু থেকে ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের দ্রাঘিমা বরাবর বিষুবরেখা পর্যন্ত দৈর্ঘ্যের কোটিভাগের একভাগকে ১ মিটার হিসেবে গণ্য করা হয়। মেট্রিক পদ্ধতিতে দৈর্ঘ্য পরিমাপের একক হচ্ছে মিটার।

১ মিটার = উত্তর মেরু থেকে বিষুবরেখা পর্যন্ত মোট দূরত্বের ১ কোটি ভাগের ১ ভাগ

প্লাটিনাম ও ইরিডিয়াম ধাতুর সংমিশ্রণে তৈরি মিটারের আসল নমুনাটি দৈর্ঘ্য পরিমাপের এককটি পৃথিবীর সব দেশের জন্য আদর্শ বা স্ট্যান্ডার্ডরূপে গণ্য করা হয়। এটি ফ্রান্সের জাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে। বিভিন্ন দেশের প্রয়োজনে আদর্শ নমুনা থেকে স্থানীয় নমুনা তৈরি করে নেওয়া হয়।

লক্ষ করি, ১৯৮২ সাল থেকে বাংলাদেশের সর্বত্র দৈর্ঘ্য মাপার জন্য, ওজন নির্ণয়ের জন্য এবং তরল পদার্থের আয়তন পরিমাপের জন্য 'আন্তর্জাতিক আদর্শমান' বা 'সিস্টেম অব ইন্টারন্যাশনাল ইউনিট' (SI) গ্রহণ করা হয়েছে।

দৈর্ঘ্য পরিমাপের এককাবলি

মেট্রিক পদ্ধতি

১০ মিলিমিটার (মি.মি.) = ১ সেন্টিমিটার (সে. মি.)

১০ সেন্টিমিটার = ১ ডেসিমিটার (ডেসি. মি.)

১০ ডেসিমিটার = ১ মিটার (মি.)

১০ মিটার = ১ ডেকামিটার (ডেকা. মি.)

১০ ডেকামিটার = ১ হেক্টোমিটার (হে. মি.)

১০ হেক্টোমিটার = ১ কিলোমিটার (কি. মি.)

১২ ইঞ্চি = ১ ফুট

৩ ফুট = ১ গজ

১৭৬০ গজ = ১ মাইল

মেট্রিক ও ব্রিটিশ পরিমাপের সম্পর্ক

১ ইঞ্চি = ২.৫৪ সে. মি. (প্রায়)

১ মাইল = ১.৬১ কি. মি. (প্রায়)

১ মিটার = ৩৯.৩৭ ইঞ্চি (প্রায়)

১ কি. মি. = ০.৬২ মাইল (প্রায়)

কাজ:

১। দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত হয় বা কাজে লাগে এমন কিছু বস্তুর নাম কর, যাদের দৈর্ঘ্য পরিমাপ করতে হয়।
২। স্কেল দিয়ে তোমার একটি বইয়ের ও টেবিলের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ ইঞ্চিতে এবং সেন্টিমিটারে মাপ। এ হতে ১ ইঞ্চি সমান কত সেন্টিমিটার তা নির্ণয় কর।
৩। মাপার ফিতা দিয়ে শ্রেণিকক্ষের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ পরিমাপ কর।

common.content_added_by

ক্ষেত্রফল পরিমাপ (৩.২)

44
44

ক্ষেত্রফল পরিমাপের ধারণা আমাদের জীবনে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বসবাসের জন্য ঘর-বাড়ি হতে শুরু করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, সরকারি বিভিন্ন ভবন ইত্যাদি আমাদের খুবই প্রয়োজনীয় স্থাপনা। এগুলো যে জমির উপর তৈরি করতে হয় তার ক্ষেত্রফল জানা আমাদের একান্ত প্রয়োজন।

কোনো নির্দিষ্ট সীমারেখা দ্বারা আবদ্ধ স্থান হলো ক্ষেত্র এবং এই ক্ষেত্রের পরিমাপকে তার ক্ষেত্রফল বা কালি বলে।

যেকোনো ক্ষেত্রের সাধারণত দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ থাকে। এ জন্য ক্ষেত্রফলের একক হিসেবে এক একক দৈর্ঘ্যের বাহুবিশিষ্ট একটি বর্গক্ষেত্রের ক্ষেত্রফলকে ধরা হয়। ক্ষেত্রফলের একককে বর্গ একক লেখা হয়। যে বর্গক্ষেত্রের বাহুর দৈর্ঘ্য ১ মিটার, তার ক্ষেত্রফল ১ বর্গমিটার। অনুরূপ ১ বর্গফুট, ১ বর্গসেন্টিমিটার, ইত্যাদিও ক্ষেত্রফলের একক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।

কোনো ক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল নির্ণয় করতে হলে, এর মধ্যে কতগুলো বর্গএকক আছে তা বের করতে হয়। মনে করি, নিচের বর্গক্ষেত্রের প্রতিবাহুর দৈর্ঘ্য ১ মিটার। অতএব, এর ক্ষেত্রফল ১ বর্গমিটার। বর্গক্ষেত্রটির প্রত্যেক বাহুকে সমান ১০ অংশে বিভক্ত করে বিপরীত বিন্দুগুলো পরস্পর সংযুক্ত করা হলো।

চিত্র: ১ এ প্রতিটি ক্ষুদ্র বর্গক্ষেত্রের বাহুর দৈর্ঘ্য ১ ডেসিমিটার।

চিত্র: ২ থেকে দেখা যাচ্ছে যে চিত্র ১এর ১টি ক্ষুদ্র বর্গক্ষেত্রে ১০০টি অতি ক্ষুদ্র বর্গক্ষেত্র রয়েছে।

১ ডেসিমিটার × ১ ডেসিমিটার = ১ বর্গডেসিমিটার।

অতএব,

১ বর্গমিটার = ১০০ বর্গডেসিমিটার।

তদ্রূপ, ১ ডেসিমিটার দৈর্ঘ্যের বাহুবিশিষ্ট বর্গক্ষেত্র নিয়ে এর প্রত্যেক বাহুকে ১০টি সমান অংশে ভাগ করে আগের মতো সংযুক্ত করে দেখানো যায় যে, ১ বর্গডেসিমিটার = (১০×১০) বর্গসে.মি. বা ১০০ বর্গসেন্টিমিটার।

অতএব,

১ বর্গমিটার =১০০ × ১০০ বর্গসেন্টিমিটার = ১০,০০০ বর্গসেন্টিমিটার।

লক্ষ করি, ৪ মিটার বর্গ এবং ৪ বর্গমিটার এক কথা নয়। ৪ মিটার বর্গ দ্বারা এমন একটি বর্গক্ষেত্রকে বোঝায় যার প্রত্যেক বাহুর দৈর্ঘ্য ৪ মিটার এবং যার ক্ষেত্রফল (৪×৪) বর্গমিটার বা ১৬ বর্গমিটার। কিন্তু ৪ বর্গমিটার দ্বারা এমন একটি বর্গক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল বোঝায় যার দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ মিটারের এককে মেপে গুণ করলে ৪ হয়।

ক্ষেত্রফল পরিমাপে মেট্রিক ও ব্রিটিশ পদ্ধতির সম্পর্ক

ব্রিটিশ পদ্ধতিতে

১ বর্গইঞ্চি = ৬.৪৫ বর্গসেন্টিমিটার (প্রায়)

১ বর্গফুট = ৯২৯ বর্গসেন্টিমিটার (প্রায়)

১ বর্গগজ = ০.৮৪ বর্গমিটার (প্রায়)

স্থানীয় পদ্ধতিতে

১ বর্গসেন্টিমিটার = ০.১৫৫ বর্গইঞ্চি (প্রায়)

১ বর্গমিটার = ১০.৭৬ বর্গফুট (প্রায়)

১ হেক্টর = ২.৪৭ একর (প্রায়)

কাজ:
১। স্কেল দিয়ে তোমার একটি বইয়ের ও পড়ার টেবিলের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ সেন্টিমিটারে মেপে এর ক্ষেত্রফল নির্ণয় কর।
২। দলগতভাবে তোমরা বেঞ্চ, টেবিল, দরজা, জানালা ইত্যাদির দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ স্কেলের সাহায্যে মেপে ক্ষেত্রফল বের কর।
common.content_added_by

ওজন পরিমাপ (৩.৩)

45
45

প্রত্যেক বস্তুর ওজন আছে। বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন এককের সাহায্যে বস্তু ওজন করা হয়। মেট্রিক পদ্ধতিতে ওজন পরিমাপের একটি একক গ্রাম।

৪° সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ১ ঘন সে. মি. বিশুদ্ধ পানির ওজন ১ গ্রাম।

মেট্রিক পদ্ধতিতে ওজন পরিমাপের জন্য ব্যবহৃত আরও দুটি একক আছে। অধিক পরিমাণ বস্তুর ওজনের জন্য এ দুটি একক ব্যবহার করা হয়। একক দুটি হচ্ছে কুইন্টাল ও মেট্রিক টন।

ওজন পরিমাপের মেট্রিক এককাবলি

১০ মিলিগ্রাম (মি. গ্রা.) = ১ সেন্টিগ্রাম (সে. গ্রা.)

১০ সেন্টিগ্রাম = ১ ডেসিগ্রাম (ডেসিগ্রা.)

১০ ডেসিগ্রাম = ১ গ্রাম (গ্রা.)

১০ গ্রাম = ১ ডেকাগ্রাম (ডেকাগ্রা.)

১০ ডেকাগ্রাম = ১ হেক্টোগ্রাম (হে. গ্রা.)

১০ হেক্টোগ্রাম = ১ কিলোগ্রাম (কে. জি.)

১ কিলোগ্রাম বা ১ কে.জি. = ১০০০ গ্রাম

১০০ কিলোগ্রাম (কে. জি.) = ১ কুইন্টাল

১০০০ কিলোগ্রাম বা ১০ কুইন্টাল = ১ মেট্রিক টন

শহরে ও গ্রামে ওজন পরিমাপের জন্য দাঁড়িপাল্লা ও বাটখারা ব্যবহার করা হয়। এ বাটখারা ৫ গ্রাম, ১০ গ্রাম, ৫০ গ্রাম, ১০০ গ্রাম, ২০০ গ্রাম, ৫০০ গ্রাম, ১ কে. জি., ২ কে. জি., ৫ কে. জি., ১০ কে. জি. ইত্যাদি ওজনের হয়।

অনেক ক্ষেত্রে শহরে দাগকাটা ব্যালেন্স দ্বারা ওজন পরিমাপ করা হয়। এটি দেখতে অনেকটাই একটি কর্তিত পিরামিডের নিচের অংশের মতো যার উপরে দ্রব্য রাখা যায় এবং যার গায়ে একপাশে দেয়ালঘড়ির ডায়ালের দাগের মতো গোলাকার রেখায় দাগ কাটা থাকে। ওজনের সমহারে কিলোগ্রামের মাপে দাগের পাশে সংখ্যা বসানো থাকে এবং ঘড়ির মিনিটের কাঁটার মতো একটা নির্দেশক কাঁটা থাকে। মাপার জন্য ব্যালেন্সের উপর কোনো দ্রব্য বসালেই কাঁটাটি যে সংখ্যাকে নির্দেশ করে সে সংখ্যাই ঐ বস্তুর ওজন। এতে প্রতি কে. জি.কে ১০ ভাগে ভাগ করে দাগ কাটা আছে।

বর্তমানে দাগকাটা ব্যালেন্স এর স্থলে ডিজিটাল ব্যালেন্স ব্যবহৃত হচ্ছে। এটি একটি ছোট বাক্সের মতো যার গায়ে এক পাশে সংখ্যায় গ্রামে ওজন প্রদর্শিত হয়। এর সাহায্যে দ্রব্যের মূল্যও নির্ণয়ের ব্যবস্থা আছে। কারণ এই ব্যালেন্সে ক্যালকুলেটরের সুবিধাও থাকে। প্রতি কিলোগ্রাম দ্রব্যের মূল্যমান দিয়ে প্রদর্শিত সংখ্যাকে ক্যালকুলেটরের নিয়মে গুণ করলেই দ্রব্যের মোট মূল্য পাওয়া যায়। এ জন্য এই ব্যালেন্স ব্যবহার করা সুবিধাজনক। তবে বেশি পরিমাণ দ্রব্য ওজন করতে এখনও দাঁড়িপাল্লা ব্যবহার করা হয়।

কাজ: দলীয়ভাবে দাঁড়িপাল্লা অথবা ডিজিটাল ব্যালেন্স ব্যবহার করে স্কেল, পুস্তক, টিফিনবক্সের ওজন পরিমাপ করে মেট্রিক পদ্ধতিতে লেখ।
common.content_added_by

তরল পদার্থের আয়তন পরিমাপ (৩.৪)

42
42

কোনো তরল পদার্থ যতটা জায়গা জুড়ে থাকে তা এর আয়তন।
একটি ঘনবস্তুর দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, উচ্চতা আছে। কিন্তু কোনো তরল পদার্থের তা নেই। যে পাত্রে রাখা হয় সেই পাত্রের আকার ধারণ করে। এ জন্য নির্দিষ্ট আয়তনের কোনো ঘনবস্তুর আকৃতির মাপনি দ্বারা তরল পদার্থ মাপা হয়। এ ক্ষেত্রে আমরা সাধারণত লিটার মাপনি ব্যবহার করি। এ মাপনিগুলো ,,,,,, _________ ইত্যাদি লিটার বিশিষ্ট অ্যালুমিনিয়াম বা টিন শিট দ্বারা তৈরি এক প্রকারের কোণক আকৃতির পাত্র বা সিলিন্ডার আকৃতির মগ। আবার স্বচ্ছ কাচের তৈরি ২৫, ৫০, ১০০, ২০০, ৩০০, ৫০০, ১০০০ মিলিলিটার দাগকাটা খাড়া পাত্রও ব্যবহার করা হয়। সাধারণত দুধ ও তৈল মাপার ক্ষেত্রে উল্লিখিত পাত্রগুলো ব্যবহার করা হয় ।

ক্রেতা-বিক্রেতার সুবিধার্থে বর্তমানে ভোজ্যতেল বোতলজাত করে বিক্রি হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে ১, ২, ৫ ও ৮ লিটারের বোতল বেশি ব্যবহৃত হয়। বিভিন্ন প্রকারের পানীয় ২৫০, ৫০০, ১০০০, ২০০০ মিলিলিটার বা অন্যান্য আয়তনে বোতলজাত করে বিক্রি করা হয়।

১ ঘন সেন্টিমিটারকে সংক্ষেপে ইংরেজিতে সি. সি. (Cubic Centimetre) লেখা হয়।

১ ঘন সে.মি. (সি.সি.) = ১ মিলিলিটার১ ঘন ইঞ্চি = ১৬-৩৯ মিলিলিটার (প্রায়)

আয়তন পরিমাপে মেট্রিক এককাবলি

১০০০ ঘন সেন্টিমিটার (ঘন সে. মি.) = ১ ঘন ডেসিমিটার (ঘ. ডেসিমি.)

১০০০ ঘন ডেসিমিটার = ১ ঘন মিটার (ঘ. মি.)

১০০০ ঘন সেন্টিমিটার = ১ লিটার

১ লিটার পানির ওজন = ১ কিলোগ্রাম

কাজ:
১। একটি পানীয়জলের পাত্রের ধারণক্ষমতা কত সি. সি. তা পরিমাপ কর।
২। শিক্ষক কর্তৃক নির্ধারিত অজানা আয়তনের একটি পাত্রের আয়তন অনুমান কর। তারপর এর সঠিক আয়তন বের করে ভুলের পরিমাণ নির্ণয় কর।

উদাহরণ ১। ১৬ একর জমিতে ৪২০ মেট্রিক টন আলু উৎপন্ন হলে, ১ একর জমিতে কী পরিমাণ আলু উৎপন্ন হয়?

সমাধান:

১৬ একর জমিতে উৎপন্ন হয় ৪২০ মেট্রিক টন আলু

১ “ ” “ ”   মেট্রিক টন আলু

= মে. টন বা ২৬ মেট্রিক টন ২ কুইন্টাল ৫০ কেজি আলু।

১ মে. টন = ১০০০ কেজি

১ একরে আলুর উৎপাদন ২৬ মেট্রিক টন ২৫০ কেজি।

উদাহরণ ২। রায়হান এক একর জমিতে ধান চাষ করে ৪ কুইন্টাল ধান পেয়েছে। প্রতি কেজি ধানে ৭০০ গ্রাম চাল হলে, সে কী পরিমাণ চাল পেল?

সমাধান:

১ কে. জি. ধানে চাল হয় ৭০০ গ্রাম

৪০০ “ ” “ ” ৭০০ × ৪০০ গ্রাম

= ২৮০০০০ গ্রাম

= ২৮০ কেজি

= ২ কুইন্টাল ৮০ কেজি

প্রাপ্ত চালের পরিমাণ ২৮০ কেজি বা ২ কুইন্টাল ৮০ কেজি।

উদাহরণ ৩। একটি মোটরগাড়ি ১০ লিটার ডিজেলে ৮০ কিলোমিটার যায়। ১ কিলোমিটার যেতে কী পরিমাণ ডিজেলের প্রয়োজন?

সমাধান:

৮০ কিলোমিটার যায় ১০ লিটার ডিজেলে

১ “ ”   “ ” =  মিলিলিটার বা ১২৫ মিলিলিটার ডিজেলে

প্রয়োজনীয় ডিজেলের পরিমাণ ১২৫ মিলিলিটার।

উদাহরণ ৪। একটি ত্রিভুজাকার ভূমির দৈর্ঘ্য ৬ মিটার ও উচ্চতা ৪ মিটার। ত্রিভুজাকার ক্ষেত্রটির ক্ষেত্রফল কত?

সমাধান:

ত্রিভুজাকার ক্ষেত্রটির ক্ষেত্রফল =× (ভূমি × উচ্চতা)

=×× বর্গমিটার = ১২ বর্গমিটার

ত্রিভুজাকার ক্ষেত্রটির ক্ষেত্রফল ১২ বর্গমিটার।

উদাহরণ ৫। একটি ত্রিভুজাকৃতি জমির ক্ষেত্রফল ২১৬ বর্গমিটার। এর ভূমি ১৮ মিটার হলে, উচ্চতা নির্ণয় কর।

সমাধান:

আমরা জানি,

× ভূমি × উচ্চতা = ত্রিভুজের ক্ষেত্রফল

বা, × মিটার × উচ্চতা = ২১৬ বর্গমিটার

বা, ৯ মিটার × উচ্চতা = ২১৬ বর্গমিটার

বা, উচ্চতা = মিটার বা ২৪ মিটার

উচ্চতা ২৪ মিটার।

উদাহরণ ৬। পাড়সহ একটি পুকুরের দৈর্ঘ্য ৮০ মিটার ও প্রস্থ ৫০ মিটার। যদি পুকুরের প্রত্যেক পাড়ের বিস্তার ৪ মিটার হয়, তবে পুকুরপাড়ের ক্ষেত্রফল কত?

সমাধান:

পাড় বাদে পুকুরের দৈর্ঘ্য = (৮০ (৪×২)} মিটার = ৭২ মিটার

পাড় বাদে পুকুরের প্রস্থ = (৫০ (৪ × ২)} মিটার = ৪২ মিটার

এখন পাড়সহ পুকুরের ক্ষেত্রফল = (৮০×৫০) বর্গমিটার = ৪০০০ বর্গমিটার

এবং পাড় বাদে পুকুরের ক্ষেত্রফল= (৭২× ৪২) বর্গমিটার = ৩০২৪ বর্গমিটার

পুকুরপাড়ের ক্ষেত্রফল = (৪০০০ × ৩০২৪) বর্গমিটার = ৯৭৬ বর্গমিটার।

পুকুরপাড়ের ক্ষেত্রফল ৯৭৬ বর্গমিটার।

common.content_added_by

অনুশীলনী

71
71

১। ১ বর্গফুট = কত বর্গ সে.মি.?

(ক) ৭২৯ বর্গ সে.মি.
(খ) ৮২৯ বর্গ সে.মি.
(গ) ৯২৯ বর্গ সে.মি.
(ঘ) ৯৯২ বর্গ সে.মি.

২। একটি ঘনকের এক ধারের দৈর্ঘ্য ৩ মিটার হলে তলগুলোর ক্ষেত্রফল নিচের কোনটি?

(ক) ৫৪ বর্গমিটার
(খ) ১৮ বর্গমিটার
(গ) ৯ বর্গমিটার
(ঘ) ৯ মিটার

নিচের তথ্যের আলোকে ৩ ও ৪ নং প্রশ্নের উত্তর দাও:

একটি আয়তাকার বাগানের দৈর্ঘ্য প্রস্থের তিনগুণ। এর চারদিকে একবার প্রদক্ষিণ করলে হাঁটা হয় ৪০০ মিটার।

৩। বাগানের দৈর্ঘ্য কত মিটার?

(ক) ৫০
(খ) ১০০
(গ) ১৫০
(ঘ) ২০০

8 । বাগানের ক্ষেত্রফল কত বর্গমিটার?

(ক) ৪০০
(খ) ২৫০০
(গ) ৫০০০
(ঘ) ৭৫০০

৫। ল্যাটিন ভাষায় ডেসি অর্থ কী?

(ক) পঞ্চমাংশ
(খ) দশমাংশ
(গ) সহস্রাংশ
(ঘ) শতাংশ

নিচের তথ্যের আলোকে ৬ ও ৭ নং প্রশ্নের উত্তর দাও:

একটি জমির দৈর্ঘ্য ২০ মিটার এবং প্রস্থ ১৫ মিটার।

৬। ঐ জমির পরিসীমা কত?

(ক) ৩৫ মিটার
(খ) ৭০ মিটার
(গ) ১৫০ মিটার
(ঘ) ৩০০ মিটার

৭। ঐ জমির ভিতরে ২মিটার চওড়া রাস্তা তৈরি করা হল। রাস্তাবাদ জমির ক্ষেত্রফল কত বর্গমিটার?

(ক) ৭০
(খ) ১২৪
(গ) ১৭৬
(ঘ) ৩০০

৮। কিলোমিটারে প্রকাশ কর।

(ক) ৪০৩৯০ সে. মি.
(খ) ৭৫ মিটার ২৫০ মি. মি.

৯। ৫.৩৭ ডেকামিটারকে মিটার ও ডেসিমিটারে প্রকাশ কর।

১০। নিচে কয়েকটি ত্রিভুজাকার ক্ষেত্রের ভূমি ও উচ্চতা দেওয়া হলো। ত্রিভুজাকার ক্ষেত্রের ক্ষেত্রফল নির্ণয় কর।
(ক) ভূমি ১০মি. ও উচ্চতা ৬ মি.।
(খ) ভূমি ২৫ সে.মি. ও উচ্চতা ১৪ সে. মি.।

১১। একটি আয়তাকার ক্ষেত্রের দৈর্ঘ্য প্রস্থের ৩ গুণ। এর চারিদিকে একবার প্রদক্ষিণ করলে ১ কিলোমিটার হাঁটা হয়। আয়তাকার ক্ষেত্রটির দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ নির্ণয় কর।

১২। প্রতি মিটার ১০০ টাকা দরে ১০০ মিটার লম্বা ও ৫০ মিটার চওড়া একটি আয়তাকার পার্কের চারিদিকে বেড়া দিতে কত খরচ লাগবে?

১৩। একটি সামান্তরিক ক্ষেত্রের ভূমি ৪০ মিটার ও উচ্চতা ৫০ মিটার। এর ক্ষেত্রফল নির্ণয় কর।
১৪। একটি ঘনকের একধারের দৈর্ঘ্য ৪ মিটার। ঘনকটির তলগুলোর ক্ষেত্রফল নির্ণয় কর।
১৫। যোসেফ তাঁর এক খণ্ড জমিতে ৫ কুইন্টাল ৭০০ গ্রাম আলু উৎপাদন করেন। তিনি একই ক্ষেত্রফলবিশিষ্ট ১১ খন্ড জমিতে কী পরিমাণ আলু উৎপাদন করবেন?
১৬। পরেশের ১৬ একর জমিতে ২৮ মেট্রিক টন ধান উৎপন্ন হয়েছে। তাঁর প্রতি একর জমিতে কী পরিমাণ ধান হয়েছে?
১৭। একটি স্টিল মিলে এক মাসে ২০০০০ মেট্রিক টন রড তৈরি হয়। ঐ মিলে দৈনিক কী পরিমাণ রড তৈরি হয়?
১৮। এক ব্যবসায়ী কোনো একদিন ২০ কে. জি. ৪০০ গ্রাম ডাল বিক্রয় করেন। এ হিসাবে কী পরিমাণ ডাল তিনি এক মাসে বিক্রয় করবেন?
১৯। একখণ্ড জমিতে ২০ কে. জি. ৮৫০ গ্রাম সরিষা উৎপন্ন হলে, অনুরূপ ৭ খণ্ড জমিতে মোট কী পরিমাণ সরিষা উৎপন্ন হবে?
২০। একটি মগের ভিতরের আয়তন ১৫০০ ঘন সেন্টিমিটার হলে, ২৭০ লিটারে কত মগ পানি হবে?
২১। এক ব্যবসায়ী কোনো একদিন ১৮ কে. জি. ৩০০ গ্রাম চাল এবং ৫ কে. জি. ৭৫০ গ্রাম লবণ বিক্রয় করেন। এ হিসাবে মাসে তিনি কী পরিমাণ চাল ও লবণ বিক্রয় করেন?
২২। কোনো পরিবারে দৈনিক ১-২৫ লিটার দুধ লাগে। প্রতি লিটার দুধের দাম ৫২ টাকা হলে, ঐ পরিবারে ৩০ দিনে কত টাকার দুধ লাগবে?
২৩। একটি আয়তাকার বাগানের দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ যথাক্রমে ৬০ মিটার, ৪০ মিটার। এর ভিতরে চতুর্দিকে ২ মিটার চওড়া রাস্তা আছে। রাস্তাটির ক্ষেত্রফল নির্ণয় কর।

২৪। একটি ঘরের দৈর্ঘ্য, প্রস্থের ৩ গুণ। প্রতি বর্গমিটারে ৭.৫০ টাকা দরে ঘরের মেঝে কার্পেট দিয়ে মুড়তে মোট ১১০২.৫০ টাকা ব্যয় হয়। ঘরটির দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ নির্ণয় কর।

২৫। একটি আয়তাকার বাগানের দৈর্ঘ্য ৫০ মি. এবং প্রস্থ ৩০ মি. এবং বাগানের ভিতরের চারিদিকে ৩ মিটার চওড়া রাস্তা আছে।
ক) উপরের তথ্যের আলোকে আনুপাতিক চিত্র অঙ্কন কর।
খ) রাস্তার ক্ষেত্রফল নির্ণয় কর।
গ) রাস্তাবাদে বাগানের পরিসীমায় বেড়া দিতে প্রতিমিটারে ২৫ টাকা হিসাবে মোট কত খরচ হবে?

২৬। একটি সামান্তরিক ক্ষেত্রের ভূমি ৪০ মি ও উচ্চতা ৩০ মি। সামান্তরিকের ক্ষেত্রফল বর্গক্ষেত্রের ক্ষেত্রফলের সমান।
ক) চিত্রসহ সামান্তরিকের সংজ্ঞা লিখ।
খ) সামান্তরিকের ক্ষেত্রফল নির্ণয় কর।
গ) বর্গক্ষেত্রের পরিসীমা নির্ণয় কর।

৭।

চিত্রে ABCD সামান্তরিকটির পরিসীমা ৩০ মিটার।
ক) সামান্তরিকের ক্ষুদ্রতম বাহুর দৈর্ঘ্য বের কর।
খ) ADF ত্রিভুজের ক্ষেত্রফল নির্ণয় কর।
গ) BCDF ক্ষেত্রফল কত বর্গসেন্টিমিটার তা নির্ণয় কর।

common.content_added_by
টপ রেটেড অ্যাপ

স্যাট অ্যাকাডেমী অ্যাপ

আমাদের অল-ইন-ওয়ান মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সীমাহীন শেখার সুযোগ উপভোগ করুন।

ভিডিও
লাইভ ক্লাস
এক্সাম
ডাউনলোড করুন
Promotion